বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন

আমাদের শিকড় হলো কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি: অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক::

প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে শিকড়ের সন্ধানে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের শিকড় হলো আমাদের কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি। এজন্য কৃষি খাতকেও বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভুত বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে রক্ষা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ ক্রান্তিলগ্নে প্রাধিকার পেয়েছে দেশের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী এরই মাঝে তাদের জন্য লক্ষাধিক কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারনেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতকে। স্বাস্থ্যখাতে আগামী অর্থবছরে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে কৃষি খাত সামনে এগিয়ে নেবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট প্রণয়নের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে শিকড়ের সন্ধানে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের শিকড় হলো আমাদের কৃষি, আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি। এজন্য কৃষি খাতকেও বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যেখান থেকে এখনও আমাদের শতকরা ৪০ ভাগের মত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই কৃষি খাতই হতে পারে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক মৌলিক এলাকা। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা এ অঞ্চলের অনেকের খাদ্যের যোগান দিতেও সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের কঠোর পরিশ্রমী আত্মপ্রত্যয়ী কৃষক ভাইদের কারণে অতি সম্প্রতি আমরা ইন্দোনেশিয়াকে পিছনে ফেলে বিশ্বে চাল উৎপাদনে স্থানে তৃতীয় উন্নীত হয়েছি। এখানে উল্লেখ্য যে, গত ৫০ বছরে আমাদের খাদ্য শষ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ যা বিশ্বে একটি রেকর্ড।

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এবারের বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোভিডের কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ কৃষক, শ্রমিক, মজুর, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, বেদে, স্বাস্থ্যকর্মী, ভ্যান চালক, রিকশাওয়ালাসহ সকল পেশার মানুষ, পান দোকান, চা দোকান, মুদি দোকান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র, কুটির ও ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ী, সকল শ্রেণি ও নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, যারা কষ্টে আছেন তাদের সকলের জন্য এ বাজেট। দেশের কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এ বাজেট হতে বাদ দিতে পারি নাই। কাউকে বাদ দিতে পারলে বাজেটের আকার অবশ্যই ছোট রাখা যেত, ছোট রাখা যেত বাজেট ঘাটতিও। কিন্তু সত্য যে বড় কঠিন, তাই সব জেনেশুনে আমরা এই কঠিনকেই ভালবেসেছি।

কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাজেটটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু আমরা বাজেট বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশাবাদী। এ প্রসঙ্গে পাঁচটি রেফারেন্স তুলে ধরেন মন্ত্রী।

১. বিগত পাঁচ বছরে আমরা বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম আমাদের প্রকৃত অর্জন প্রতি বছরই তার চাইতে বেশি ছিল।

২. বিগত ১০ বছরে জিডিপিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৮ শতাংশ যা বিশ্বে সকলের উপরে। আমাদের কাছাকাছি ছিল চায়না ১৭৭ শতাংশ নিয়ে এবং ভারত ১১৭ শতাংশ।

৩. গত ১১ বছরে আমাদের জিডিপি’র আকার বেড়েছে ৩ গুণ।

৪. দ্যা ইকোনমিস্ট ২মে ২০২০ তারিখে গবেষণামূলক একটি প্রতিবেদনে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশ রয়েছে ৯ম শক্তিশালী অবস্থানে।

৫. গত ১১ জুন এই মহান জাতীয় সংসদে আমরা বাজেট ২০২০-২০২১ উপস্থাপন করেছি, এর মাত্র সাতদিনের মাথায় গত ১৮ জুন ২০২০ তারিখে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে ৭.৫ শতাংশ যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশের একেবারে কাছাকাছি।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই রেফারেন্সে প্রতীয়মান হয় আমরা বাজেটটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। এই বাজেটটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে আমাদের দেশের সকল মানুষ যারা আমাদের প্রাণশক্তি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com